"অনুকূল আবহাওয়া, পোকামাকড় ও রোগ বালাই কম ও স্থানীয় জাতের বীজ ও জৈব সার ব্যবহারের ফলে গাছ ও লতাগুলো বেশ মোটা তাজা হয়েছে। যারফলে, অন্য কয়েক বছরের তুলনায় ফলন হয়েছে ভালো। বাঙ্গির আকার তুলনামূলক বড়।
বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রত্যাশিত মূল্য পেয়ে উচ্ছ্বাসিত এখানকার বাঙ্গি চাষিরা। তাইতো, ঘরের গৃহিণী ও শিশুরাও আনন্দে জমি থেকে বাঙ্গি সংগ্রহ করছে। স্বাদে অতুলনীয় এখানকার বাঙ্গি নেওয়ার জন্য মাঠে ঘুরছে বিভিন্ন বাজারের পাইকিরা ব্যবসায়ীরা। এমন চিত্র দেখা গেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ভেলানগর গ্রামের বাঙ্গির মাঠে।
জানা যায়, দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের টামটা ও ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামে প্রায় দুই শত বছর ধরে বাঙ্গি ও তরমুজের চাষ করে আসছে স্থানীয়রা। বংশ পরাম্পরায় এখনও চাষ করে আসছে তাদের ঐতিহ্যের ফসল বাঙ্গি।
তরমুজের ফলন আগের মতো না হওয়ায়। মুখ ফিরিয়েছে কৃষকরা। তবে, এ বছর বাঙ্গির ভালো ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ করা হয়েছে যার অধিকাংশই ভেলানগর মাঠে।
বেলানগর গ্রামের বাঙ্গি চাষী পারভীন বেগম (৩৭) বলেন, ৯০ শতক জমির মধ্যে বাঙ্গির চাষ করেছি। আমার খরর্চ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আজকে প্রথম আমার জমি থেকে ১১৭টি বাঙ্গি পাইকারী ১৩হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। সামনে ২০- ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। ভালো মূল্য পেয়েছি, আমি অনেক খুশি।
আশোক মোল্লা, সাদিম মোল্লা বলেন, আমাদের বাপ দাদারা বাঙ্গি চাষ করে আসছে বহু বছর আগ থেকে। আমরাও করছি। এই বছর ভালো ফলন হইছে। বাজারে চাহিদা রয়েছে। তাই ভালো দামে বিক্রি করছি।
আবুতাহের মোল্লা বলেন, শনিবার থেকে জমি হতে বাঙ্গি কাটা শুরু করছি। প্রথম কাটায় ১৪০থেকে ১৫০টাকা, দ্বিতীয় কাটায় ১২০, তৃতীয় কাটায় ১০০ থেকে ১২০ টাকা মূল্যে প্রতি পিচ বাঙ্গি বিক্রি করছি। পাইকারী ব্যবসায়ী মো. মিন্টু মিয়া বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে বাঙ্গির ব্যবসা করি। এখান থেকে ৫ থেকে ৬ কেজী ওজনের প্রতি পিছ ২০০ টাকায় কিনে, ২৫০ টাকা, ৩ থেকে ৪ কেজি ১২০ টাকায় কিনে ১৫০-২০০ টাকা ও ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের বাঙ্গি ১০০টাকায় কিনে খুচরা বাজারে ১২০/১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কাওরান বাজার, কুমিল্লা ও দাউদকান্দির বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাই।
আরেক ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এবছর বাঙ্গির সাইজ ভালো হয়েছে। এখানকার বাঙ্গি সুস্বাদু। বাজারে চাহিদা ভালো।
কৃষিতে দুইবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত, এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন (এআইপি) মতিন সৈকত বলেন 'বাঙ্গি শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে, পানির ঘাটতি পূরণ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি আছে। শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। বাঙ্গিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টের এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাঙ্গি উপকারী। শারিরিক অবসাদ দূর করতে মানসিক প্রশান্তি আনতেও বাঙ্গি সহায়ক'।
উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা মো. জাবিহ উল্লাহ বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় পোকামাকড় ও রোগ বালাই কম ছিলো। স্থানীয় জাতের বীজ ও জৈব সার ব্যবহারের ফলে ভালো ফলন হয়েছে। এবং তুলনামূলক আকার বড় হয়েছে। কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তদারকিতে ছিলো।
পিকে/এসপি